০৩:২১:৪৩ শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : শুধু কুলভূষণ যাদব বা সর্বজিৎ সিং নন। ইসলামাবাদের ভ্রান্ত নীতির জেরে কিংবা চাপিয়ে দেওয়া গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আরও অনেককেই বন্দি হতে হয়েছে পাকিস্তানে। কেউ দীর্ঘদিন জেল খেটে মুক্তি পেয়েছেন। কারও প্রাণদণ্ড হয়েছে।
দীর্ঘদিন গুপ্তচরবৃত্তি করেও নির্বিঘ্নে দেশে ফিরেছেন একমাত্র অজিত ডোভাল। হ্যাঁ, বর্তমান ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা। মুসলিম সেজে সাত বছর পাকিস্তানে আন্ডার কভার এজেন্ট ছিলেন অজিত ডোভাল। বর্তমান নিরাপত্তা উপদেষ্টার ছদ্মনাম ছিল ‘০০৭’।
দীর্ঘদিন গুপ্তচরবৃত্তি করার পর আইএসআই এজেন্ট পরিচয়ে ১৯৮৮ সালে ‘অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার’-এর ঠিক আগে অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরে ঢুকে অজিত ডোভাল ভিড়ে যান জঙ্গি শিবিরে। আগাগোড়া ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।
নাম ধর্ম পাল্টে পাকিস্তানে থেকে পরমাণু তথ্য পাচার করতেন মোহনলাল ভাস্কর ওরফে মোহাম্মদ আসলাম। চরবৃত্তির দায়ে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত বন্দি পাকিস্তানের জেলে। সাত বছর জেল খাটার পর হরিবংশ রাই বচ্চনের(অমিতাভ বচ্চনের বাবা) সুপারিশ এবং সিমলা চুক্তির সৌজন্যে মুক্তি পান। দেশে ফিরে তিরাশিতে লিখেছিলেন, ‘ম্যায় পাকিস্তান মে ভারত কা জাসুস থা’।
ভারতীয় সেনা থেকে ৪৮০ টাকা মাস মাইনে এজেন্ট ছিলেন কাশ্মীর সিং ওরফে মোহাম্মদ ইব্রাহিম। কিন্তু ১৯৭৩ সালে পাক সেনার হাতে ধরা পড়েন। তারপর ৩৫ বছর পাক জেলে কাটানোর পর মুক্তি পান। পাকিস্তানে থাকাকালীন আগাগোড়া অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাশ্মীর সিং। কিন্তু ২০০৮ সীমানা পেরিয়েই বলেছিলেন, ‘দেশের স্বার্থেই আমি চরবৃত্তি করেছি পাকিস্তানে।’
সন্ত্রাসবাদী এবং ভারতীয় গুপ্তচর তকমা দিয়ে সর্বজিৎ সিংকে ১৯৯১-এ প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দেয় পাকিস্তান। তারপর শুধুই নাগাড়ে জেলখাটা আর প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়ে গিয়েছেন। অবশেষে সেই আর্জিতে সাড়া দিয়েই ২০০৮ সালে সর্বজিতের প্রাণদণ্ড মুলতুবি করে পাকিস্তান। তবে বহু কূটনৈতিক প্রচেষ্টাতেও তাকে ভারতে ফেরানো যায়নি। ২০১৩ সালে লাহৌরের জেলেই প্রাণঘাতী হামলায় মৃত্যু হয় সর্বজিতের।
মাত্র একুশ বছর বয়সেই 'র'-এর নজরে পড়ে যান রবীন্দ্র কৌশিক ওরফে নবি আহমেদ শাকির। দু'বছর 'র'-এর অধীনে ট্রেনিং শেষ করে পাড়ি দেন পাকিস্তানে। পাকিস্তানে গিয়ে মুসলিম সেজে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পাক সেনার মেজর পদে যোগ দেন।
সংসার পেতে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত ভারতে টানা তথ্য পাচার করেন রবীন্দ্র। ১৯৮৫ সালে পাক প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হন ‘দ্য ব্ল্যাক টাইগার’। ১৬ বছর জেল খেটে ২০০১ সালে মৃত্যু হয় যক্ষ্মায়।
বাবার ইচ্ছায় কাশ্মীরের গ্রাম থেকে উঠে আসা গুপ্তচর সেহমত খান। আলিয়া ভাট্টের অভিনয়ে হালে জনপ্রিয় এক নাম। সেহমতের দেওয়া তথ্যে ভর করেই ৭১ ভারতীয় যুদ্ধজাহাজের উপরে পাক হানার ছক ভেঙে দেয় দিল্লি। কিন্তু সেহমত দেশে ফেরেন অবসাদ নিয়েই।
১৯৮৯ সালে সেনা তথ্য পাচারের সময়ে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে শেখ শামিমকে হাতেনাতে ধরা হয়েছিল বলে দাবি ইসলামাবাদের। ১০ বছর পাকিস্তানে জেলবন্দি ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৯৯ সালে চর সন্দেহেই ১০ বছর জেল খাটা শামিমকে ফাঁসিতে ঝোলায় পাকিস্তান। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও পাক গুপ্তচরকে ফাঁসি দেয়নি ভারত।