০২:৩৬:১১ শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩
নড়াইল : হাসপাতালে মাশরাফির ঝটিকা অভিযান; ঝড়ের মুখে ডাক্তার-নার্সরা। খেলার মাঠে বল হাতে ঝড় তুলেন টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এবার তিনি ঝড় তুললেন সাংসদ হিসেবে। দুদিনের নড়াইলের সফরে অন্যরকম এক মাশরাফিকে দেখেছে নড়াইলবাসী। নির্বাচনী এলাকার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত দৌড়ে বেড়িয়েছেন। কখনো মোটর সাইকেলে আবার কখনো গাড়িতে। খেলোয়াড়ী জীবনে যেমনি নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য খেলেন তেমনি জনপ্রতিনিধি মাশরাফিকে নড়াইল বাসী দেখলো অন্য এক চরিত্রে।
জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগদানের আগে দুদিনের নির্বাচনী এলাকায় সফরে মাশরাফি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন হাসপাতালকে। গতকাল ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩ টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা ২ ঘন্টা নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফর করেন ম্যাশ। নারী ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সমস্যা শোনেন। ওই সময় পুরো হাসপাতালে মাত্র একজন ডাক্তারের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি।
সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ২ জন নার্স দেখে তাদের ডিউটির ব্যাপারে খোজ নেন। জানতে পারেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত নার্স থাকলেও ২-১ জন নার্স দিয়েই বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে। ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক নিচে নেমে এসে নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজ করেন মাশরাফি। নার্সদের কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে টেলিফোনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এসময় একজন সুপারভাইজারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং অপরজনের ফোন খোলা থাকলেও রিসিভ করেননি।
রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে দেখেন এবং মোবাইলে ছুবি তুলে নেন। কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা এবং দূর্গন্ধ তাকে অত্যন্ত বিব্রত করে তোলে। তিনি এ ব্যাপারে জানার জন্য আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে ফোন করতে বলেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিথী খাতুন এসময় অফিসে উপস্থিত থেকে মাশরাফির নানা প্রশ্নের জবাব দেন। মাশরাফি জানতে পারেন, হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট থাকলেও নার্সের কোনো সংকট নেই। এই মুহূর্তে ৭৩ জন নার্স রয়েছে ওই হাসপাতালটিতে।
এরপর মাশরাফি পুনরায় দোতলায় এসে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চেয়ে হাজিরা খাতা দেখেন। হাজিরা খাতায় সার্জারী চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.আকরাম হোসেনের ৩ দিনের অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে ছুটির আবেদন দেখতে চান। পরে জানতে পারেন ছুটি ছাড়াই সেই ডাক্তার ৩ দিন অনুপস্থিত!
এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে টাইগার ক্যাপ্টেন প্রথমে রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করলে তিনি রোগীকে অর্থাৎ মাশরাফিকে রবিবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন। এ সময় নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি ডাক্তারকে বলেন, 'এখন যদি হাসপাতালের সার্জারী প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কী করবে?' এরপর সেই ডাক্তারকে তার কর্তব্যর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দ্রুত এলাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেন তিনি।